বইমেলা, পিছুটান

  প্রতি বছরের মতো এ বছরও শেষ হয়ে গেল বইমেলা। হ্যা, সেই অবধারিত মন্তব্য টাই বইমেলার সবার মুখে। তবু যেটুকু তার 2015 থেকে 2016 হতে লেগেছে, তা হয়তো গত বছর তার ছিল না। আগামী বছরেও থাকবে না। সেই নতুনের আনন্দ টুকু বুঝি একেবারেই নতুন। সেই চিরাচরিত ভিড়, বই কেনা, না কেনা, দেখা, না দেখা, হারানো, খুঁজে পাওয়া, সেই ছোট্ট ছোট্ট আবেগ গুলো আবার ফিরে পাওয়া মুশকিল! তাই হয়তো প্রতিটা বইমেলা  আলাদা। কিছু নতুন দিয়ে যায়, বইয়ের বাইরেও!
  এক মহিলা বলছিলেন, "খামোখা এখান দিয়ে কিনলে তো 10% ই ছাড় পাওয়া যাবে। কলেজ স্ট্রিট দিয়ে কিনলে তো 20-25 % ছাড় পাওয়া যাবে!!" প্রসঙ্গ টা বাস্তবিক। আমরা এই মুদ্রাস্ফীতির যুগে মূল্যবোধ টাকেই প্রাধান্য দেব, এ আর নতুন কি!! তবে কিনা আমরা যারা নিত্য যাত্রী,যাদের সকাল হয় অফিসে আর সন্ধ্যে, সেটাও হয় অফিসে, তাদের জন্য বইয়ের চাহিদা সাময়িক। নেহাতই উদ্দেশ্য প্রনোদিত। এখন তাদের এই সময়ের কালচক্রে (মানে ওই কাল করবো, কাল করবো, ওই আর কি!!) অফিস ছেড়ে বই কিনতে যাওয়া খুবই মুশকিলের! এহেন সময়ে যদি কেউ সব বই, যা কলেজ স্ট্রিট এ দেখতে পাওয়া যায়, যা গোডাউন এ অন্ধকারে পরে থাকে , এমনকি যা কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার আগেই প্রেস থেকে বইমেলায় পৌঁছায়, সেই সব বই হাতে পেলে 10% ছাড় আমাদের তরফ থেকেও দেওয়া যেতেই পারে। বিশেষত যেখানে আবেগ জড়িয়ে আছে।
  বইমেলা আমার মতো অনেকেরই পিছুটান। সুযোগ সন্ধানী বহু মানুষের স্মৃতি আকুলতার খোরাক যোগায় বইমেলা। সেই যে ছোট্ট বেলায় বাবার হাত ধরে বইয়ের স্টলে স্টলে ঘুরেছি, বইয়ের গন্ধ গায়ে মেখেছি,  আর টুকরো টুকরো Nostralgia গুলোকে আকড়ে ধরে আজও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে চলেছি, সেই পরম্পরা আজও চলেছে বাকি দের মধ্যে। কত ছোট্ট ছোট্ট অবাক হওয়া মুখ সামনে নাম না জানা অজানা বইয়ের নাম জানতে ব্যস্ত, হয়তো তারাই একদিন তাদের কচিকাঁচাদের নিয়ে ভিড় জমাবে বইমেলায়। ক্রমেই চলতে থাকবে তাদের এই বইয়ের দেশে adventure, অবলীলাক্রমেই চলতে থাকবে!
  হয়তো এই রীতি, এই আদর্শ গুলো একই থেকে যাবে, পাল্টে যাবে শুধু আধুনিকতার পরিচয় টা, পাল্টে যাবে বই , তাদের লেখক, তাদের লেখারাও.. আমরা যা পেয়েছি, তা পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো পাবে না। যা তারা পাবে, হয়তো আমরা তা জানতেও পারবো না। কিছুটা আবেগ আর কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই কেটে যাবে স্মৃতির বইমেলা।।

0 comments:

Post a Comment