বেসরকারি ভুত


হ্যা, বেসরকারীই বটে! মানুষই মরে  যখন ভুত হয়, তখন ভুতের পরিচয়ই বা আর পালটায় কেন! মানুষ যখন হিন্দু মুসলিম, ধনী গরিব ব্যতিরেকে শুধু বেসরকারি চাকুরিজীবি বলেই পরিচিত হয়ে থাকে, তখন ভুতের ক্ষেত্রেও সেই সূত্রই খাটে বৈকি!

এহেন কলিকাতা তে বেসরকারি চাকুরিজীবি মনে ক্ষমতা পরিসীমিত, যার বাইরে ভাবনারও কোনো আভাস পাওয়া যায় না! কাজ করা তো দূরের কথা!

যখন ভুতের কথাই হচ্ছে, কিছু বেসরকারি ভুতের কথাই বলা যাক। কলিকাতা এবং বহির্বিশ্বের বহু লোকের অভিমত, wipro অফিসে নাকি ভুত আছে। বহুজন নাকি তাদের দেখেওছে! যদিও যারা দেখেছে, তাদের কারা দেখেছে, তা আমার জানা নেই।


সে কথা কতখানি সত্যি, কত টা মিথ্যে, সে প্রশ্নে না যাওয়াই ভালো, তবে কথাখানা রোমাঞ্চকর তো বটেই!
গত আড়াই বছর সেই ভুতুড়ে অফিসেই কাজ করছি আমি! যদিও তেমন কোনো ভুতুড়ে লোকের হদিশ পাইনি! বলাই বাহুল্য, ভুত বাবাজি থেকে থাকলেও দর্শন দিতে নারাজ!
বেশ কিছু ঘটনা যা শুনেছি, যেমন, wash রুম এ নাকি মাঝে মধ্যে কোনো সাদা কাপড় পরে কাউকে দেখা যায়। আবার নাকি সে নিমেষেই মিলিয়ে যায়। লিফ্ট টাও মাঝ রাতে কখনো কখনো থেমে যায়, দরজা আপনা থেকেই খুলে যায়, যেন কেউ লিফ্ট ব্যবহার করছে!
সাম্প্রতিককালে আমি সেই বিল্ডিং গুলোরই একটাতে কাজ করছি। যথারীতি আমি আর আমার সাথে যারা রয়েছে, সর্বদাই খুঁজে চলেছি তাদের!

মাঝে কয়েকদিন কাজ শেষ করতে বেশ দেরি হতো। তখন রাত পর্যন্ত কাটাতে হতো। সে সময়ে আমিও বেশ কিছু ঘটনা দেখেছি, যার কোনো বাস্তবিক ব্যাখ্যা আমি পাইনি।

খালি ঘরে আমি যখন কাজ করছি, ঘরে আর কেউ নেই। হঠাৎ ই শোনা যেত কীবোর্ড এর শব্দ। বুঝি কেউ কম্পিউটার এ কাজ করছে। প্রথম দিন টা অতটা খেয়াল করিনি। দ্বিতীয় দিন ও একই ঘটনা। ভাবলাম বুঝি সিপিইউ এর ভিতরে কিছু আওয়াজ হচ্ছে। উঠে দেখতে গেলাম। কিন্তু ঘরের পিছনের দিকে গিয়ে যখন দাঁড়ালাম, আওয়াজ টা বন্ধ হয়ে গেল। রোজই এই একই ঘটনা ঘটতো। আমি যেই পিছনে তাকাতাম আওয়াজ বন্ধ হয়ে যেত। সিপিইউ এর ফ্যান এর আওয়াজ আমি চিনি। কিন্তু এ কীবোর্ড এর আওয়াজ এর কোনো উৎস খুঁজে পেতাম না।

মাঝে মাঝে দরজাতে টোকা দেওয়ার শব্দ হতো! বাইরে বেরিয়ে কাউকে দেখতে পেতাম না। আর এরকম টা ঠিক তখনই হতো যখন আমি একা থাকতাম।

সেদিন কয়েকজন বললো ব্যালকনিতে যাওয়ার গেট টা নাকি আপনা দিয়েই খুলে আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একজন নয়, চার পাঁচ জন একই ঘটনা দেখেছে, এবং সেখানে কেউ ছিল না! না কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, না হাওয়ায় খুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ!!

এত কিছু বুঝি, তবু তাদের দেখতে পেলাম না আজ অব্দি। সে ইচ্ছে আমার অপূর্ণই রয়ে গেছে। হবেও না বোধ হয়।

সে যাই হোক, বোধ হয় তারা দেখা দেন না, তারা বেসরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন বলেই। ক্ষমতার সীমা পার করতে তারা কেউই আশাবাদী নন। সেই ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করার পর যখন আমার নিজের বাড়ি তে শুধু শুতে যাই, আবার কালকের কথা ভাবতে ভাবতে না জানি কালও এসে পড়ে! ভাবতে ভাবতেই শেষ হয়ে যায় দিন , সপ্তাহ, মাস, বছর। রয়ে যায় শুধু সংজ্ঞা টা। চাকুরিজীবি!

সেই ভুতদের বেলাতেও বোধ হয় তাই! হয়তো এই অফিসে, নতুবা অন্য কোনো অফিসে, হয়তো অফিসেই নয়, অন্য কারো বাড়িতে, কারও কারখানায়, কারও সেরেস্তায়, কারও জমিতে, এভাবেই কেটেছে দিন! রাতও! আর এমনিভাবে নিজের ও পরিবারের জন্য শহীদ হয়েছেন। সেই তাদের ক্ষমতা সীমিতই হবে, তা তো জানা কথা! তাই তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ আমি দেখিনা!

আমি নির্বিঘ্নেই তাদের সাথে দিন ও রাত কাটাই। জানি তারাও আমার মতই। অনেক কিছু ভাবে। কিন্তু করার সময়, ওই! "বেসরকারি চাকুরিজীবি"!!

From Onyosomoy.

0 comments:

Post a Comment